নচিকেতা সব বলে দিয়েছেন৷

Agnish Kumar Das
7 min readSep 1, 2024

--

ছবিটি আমারই তোলা।

একটা মানুষকে জীবনে অনেককিছুই দেখতে হয়৷ দেখতে হয় কমিউনিস্ট সমর্থককে ধর্মান্ধ শক্তির সমর্থক হয়ে উঠতে, দেখতে হয় একজন কর্মরত ডাক্তারের কর্মক্ষেত্রে ধর্ষণ ও খুনের খবর, দেখতে হচ্ছে একজন ব্যক্তির প্রতিবাদের ভাষা কী হওয়া উচিত সেটা সামাজিক মাধ্যমের খাপ পঞ্চায়েত নেতাদের কুক্ষিগত বিষয় হয়ে যাওয়া৷ যাইহোক, এই কথাগুলো মাথার মধ্যে যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল, তখনই মাথায় একটা বেখাপ্পা ভাবনা এলো৷ ভাবনাটাই এই লেখার শিরোনাম৷
গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে, মূল বিষয় উপস্থাপন করা যাক৷ নচিকেতার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে ৩১ বছর আগে। দেখতে দেখতে তিন দশকের রাস্তা অতিক্রম করে ফেললেন নচিকেতা বাংলা গান নামক রাস্তায়৷ প্রায় চার প্রজন্ম দেখছেন তাঁকে, শুনেছেন তাঁকে, জেনেছেন তাঁকে। প্রশ্ন হোলো, বুঝেছেন কতজন? আমার বিশ্বাস বেশীরভাগই বোঝেনি, বাকি সবকিছুর মতনই হুজুগে নেচেছে, বুঝেছে ঘোড়ার ডিম৷ এবং তাই এখনো কি-বোর্ড নামক এক পর্দার আড়াল থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যায় কিছু অর্বাচীন আর কথায় কথায় প্রশ্ন করে, “নচিকেতা প্রতিবাদ করছেন না কেন?” আচ্ছা, দেখা যাক যে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন কোন বিষয় আমাদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার ওপর আঘাত করছে৷ মোটের উপর ভেবে দেখলে, পরিবেশ, ধর্মান্ধ শক্তির বিস্তার, রাজনৈতিক দুর্নীতি, গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, সংবাদমাধ্যমের দীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে দুর্নীতি, পুঁজিবাদ ও তার হাত ধরে ভোগবাদের আগ্রাসন, নারী স্বাধীনতা। এই নিয়ে নচিকেতা কবে কী লিখেছেন একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক৷

১. পরিবেশ৷
“সবুজ পৃথিবীটাকে যন্ত্রের কালো হাতে,/শ্বাসরোধ করে যে প্রগতি,/পরিসংখ্যানে মাপে জীবনের ক্ষয়ক্ষতি,/
এমন প্রগতি চাই না।” ~ শুধু বিষ দাও (১৯৯৩)৷

“ভিড় করে ইমারত আকাশটা ঢেকে দিয়ে,
চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ।” ~ চোর (১৯৯৩)৷

“বলে ব্যাটা এই ধরাতে, মানুষ যদি নাইবা থাকে,/এই গ্রহ টার ভালোই হোত, ফলে ফুলে ভরিয়ে দিত,/সভ্যতার নামে কেউ আর ধ্বংস চাইতো না৷” ~ ধনঞ্জয় (২০২০)।

২. ধর্মান্ধ শক্তির বিস্তার৷
“দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে,/ঐ ধর্মের বাঘ হেসে, আবার উঠোনে এসে,/আশ্রয় চেয়ে যায় মানুষেরই কাছে। তাই, ভয় আছে
দু নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয়
আছে।
ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ,
ভাঙা কাঁচ, ভাঙা মন যায় না,/ রাম আছে, শ্যাম আছে, কোরাণী সেলাম আছে,/রক্তলোলুপ কিছু হায়না।
এদেশ টা ফাঁকা আছে, বিদেশের টাকা আছে,
ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে।” ~ এই বেশ ভালো আছি (১৯৯৩)৷

“এদিকে ধর্ম-ধর্ম-ধর্ম নিয়ে চলছে বামাল
ধর্মকে তোয়াজ করে সব শালারাই সাদা বা লাল।” ~ উলটো রাজার দেশে (১৯৯৫)৷
“ধর্মের হাত ধরে সাজে অমায়িক/তবু নাকি এরা নয় সাম্প্রদায়িক।” ~ নিলামে উঠছে দেশ (১৯৯৮)৷

“‘প্ল্যানচেটে ডাক না সালা,’ দশরথকে বলবেন তিনি/
‘কোথায় জন্মেছে রাম, আসল কোথায় রাম-জন্মভূমি?’/নয়তো আজ অযোধ্যায় নয় কিষ্কিন্ধ্যায়, কাল ধর্মতলায়- জন্মেই যাবেন রাম দেশের কোণায়-কোণায় ঘণ্টায়-ঘণ্টায়।” ~ দিন শেষে রাত্রি আসে (২০০৪)৷

“আমরা কখনো ডানে, আমরা কখনো বামে,/কখনো আমরা ছিন্নমূল, আশ্র‍য় নিয়ি রামে।” ~ হে ভগবান (২০১৫)৷

“জাতি বিদ্বেষেতে ব্যস্ত যারা, তাদের বলা হোক-
পৃথিবীতে দুটোই জাতি: গরিব আর বড়লোক,/ এর বাইরে যারা থাকে, তারা আসলে দালাল/তারা কেউ গেরুয়া, কেউ তেরঙ্গা, কেউ বা সালা লাল!” ~ অপ্রকাশিত গান৷ প্রথমবার শুনেছি ২০১৮-এ৷

৩. রাজনৈতিক দুর্নীতি৷
“চুরি বা শ্রম চুরি যাহোক এবার,কোনটা জোচ্চুরি আসল ব্যাপার!/সমাজতন্ত্রের ছাতার তলায়- উই দম্পতি কেন বাসর সাজায়?” ~ কে যায় (১৯৯৪)৷

“সে দেশে অর্থের কারচুপিতে সিদ্ধ যিনি-অর্থমন্ত্রী/দেশের শত্রু মাঝে প্রধান যিনি-প্রধানমন্ত্রী/সে দেশে ধার করে, ভাই, শোধে রাজা ধারের টাকা/মরে ভূত হল মানুষ, লোক দেখানো বদ্যি ডাকা।” ~ উলটো রাজার দেশে (১৯৯৫)৷

“মন্ত্রীরা সব হারামজাদা/আস্ত বদের ধাড়ি, তুড়ুক নাচে, মন্ত্রিসভা এখন বাঈজী বাড়ি।……
……মন্ত্রী গুলো কুলাঙ্গার/ভালো দাম পেলে এরা বাপকেও দেবে বেচে!” ~ আমি মুখ্য সুখ্য মানুষ (২০০৩)৷

“চুরি করনা, করনা চুরি, করনা অগুনতি,/পশু খাদ্য কেলেঙ্কারীর পরও কেউ হয় রেলমন্ত্রী/কি আর হবে বড়জোর বসবে কমিশন,/সবাই জানি সে কমিশনের নেই কনক্লুশন।/ওরে গালাগালি একটু নাহয় খাবি তাতে কি,/ওরে মরা মানুষের চুল ছিড়লে তাতে ওজন কমে কি?” ~ আমার সোনা চাঁদের কণা (২০০৭)৷

“নিপাত যাক রাজনীতি, মন্ত্রী, সব গণ্ডগোল,/ সব শুয়োরের বাচ্চারাই করাপ্টেড, দেশটা পিঁজরাপোল,/
হাল্লা, হাল্লা, হাল্লা বোল!” ~ হাল্লা বোল (২০১২, ২০১৭)৷

“ভোট পিছু কত খরচ, জানতে না চাওয়া ভালো,/একেকটা ভোট মুছে দিয়ে যায় অর্থনীতির আলো।…
…তৃতীয় বিশ্ব গিয়েছে গচ্চা, ধুঁকছে ‘সারে যাহাঁ সে আচ্ছা, লুটে খা শুয়োরের বাচ্চা।” ~ হে ভগবান (২০১৫)৷

“আমার ইচ্ছে করে বিধানসভায় গিয়ে দেওয়ালে অপুষ্টির ছবি আঁকি।” ~ ইচ্ছে (২০১৫)।

“যারা খেয়েছেন কাট মানি,/দাদারা অথবা দিদিমণি,/
এসেছে সময় গতিময়, দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে
ফেরত দিন।
মন্ত্রী অথবা আমলা,/জনরোষ এবার সামলা,/তুলবে চামড়া, অসাধু দামড়া,বাজছে বাতাসে রুদ্রবীন, ডাকছে দিন।” ~ কাটমানি (২০১৯)৷

৪. গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ৷

“ডাইনে বাঁয়ে, গঞ্জে গাঁয়ে,/পুরানো অথবা নতুন অধ্যায়ে,/ বিশৃংখলা যতই বাড়ুক,/ গণতন্ত্র রাষ্ট্র যন্ত্র দুচোখ বুজে রয়,/ভয় ! ভয় ! ভয় ! ভয় !/পাছে ভোট নষ্ট হয়।” ~ ভয় (১৯৯৫)।

“এখানে এখনো উদাসীন হয়ে, মানুষ চলেছে জীবনকে নিয়ে বইয়ে, গণতন্ত্রকে গণধর্ষণ করে চলে কিছু লোক।” ~ রাজশ্রী-৩ (২০০২)।

“বিরোধ, বিরোধ বিরোধ,/ বিরোধের মুখে দাও নিরোধ,/ গণতন্ত্র বাঁচে তাতেই, ভুলে যাও সব প্রতিরোধ।” ~ বিরোধ (২০১৭)৷

“ভোট না দিলে, রিগিং আছে, পুনরনির্ধারিত,/ পরে হুর্কো দেবো, দিলাম সে ঈঙ্গিতও।” ~ পুনরনির্বাচিত (২০১৭)৷

“তুমি চাইলে স্বপ্নপুর, এদিকে জ্বলছে মণিপুর।” ~ হয়তো তোমারই জন্যে (২০২৩)৷

৫. কৃষক-শ্রমিকের অধিকার৷
“শ্রমিকের মুক্তির গান, কৃষকের হাতিয়ারে শান,
শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন, ঘৃণার প্রতিপালনেতে যত্ন।” ~ অনির্বাণ (১৯৯৪)৷
“তার দেশেতে বড় অনাচার,অত্যাচারীর হাতে শাসন,/
তারা শ্রমিকের শ্রম করে চুরি, কৃষকের জমি আগ্রাসন।” বুড়ো সলোমন (২০০৭)৷
“তুমি চড়লে স্বপ্নরথে, এদিকে কৃষক নেমেছে পথে।” ~ হয়তো তোমারই জন্যে (২০২৩)৷

৬. সংবাদমাধ্যমের দীনতা৷
“এই প্রগতির হাত ছেড়ে যাবে তুমি কতদূরে,/ ঘরে ঘরে টেলিভিশন,/সরকারি এ প্রগতি, পাল্টাবে রাতারাতি, পাল্টাবে না শুধু এ গান।” ~ অবিশ্বাসের ঋণ (১৯৯৭)৷

“ সংবাদপত্র- দৈনিক বা পক্ষ, শকুনিও নাকি শোনা যায় নিরপেক্ষ।” ~ নিলামে উঠছে দেশ (১৯৯৮)৷

“স্বপ্ন এখানে টিভি পর্দায়, শয়তান জিভ কাটা লজ্জায়।” ~ রাজশ্রী-৩ (২০০২)৷

৭.শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে দুর্নীতি৷
“ছেলে কি প্রতিভাবান?/ছেলে কি প্রতিভাবান?/হক কথা শুনে যান,/প্রতিভা-ট্রতিভা সব নাথিং বাট ফান,/ রাম নাম মনে করে,/ জপে যান বার বার একটি ছোট্ট কথা “ম্যানিপুলেশন”…
শিক্ষার আয়নায় সমাজকে চেনা যায়,/ সমাজ কি দেখে মুখ শিশুদের আয়নায়?/ যে শিশু জন্ম নিল শিক্ষার বহু দূরে,/ শিক্ষা কি আলো দেয় তার কালো মুখ ভরে?” ~ মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেই জন (১৯৯৩)৷

“আমার পরিচয় — বেকার যুবক আমি, সম্বল একটাই দৈন্য।/ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে, পকেটের ভাঁড়ারটা শূন্য।” ~ সারে যাঁহা সে আচ্ছা (১৯৯৩)।

“সে দেশে করে পাস M.A., B.A., কেরানির জীবনযাপন,/ রাজনীতি করলে রে, ভাই, degree-’র কি প্রয়োজন, জনগণ তুলে দেবে তোমার হাতে দেশের শাসন।” ~ উলটো রাজার দেশে (১৯৯৫)৷

“পাশ করলে তবে, চাকরি দিতে হবে, পরিক্ষা পিছনো তাই কৌশলে।” কি হবে (১৯৯৫)৷

“আজকে যিনি কয়লা মন্ত্রী, কালকে দেখেন শিক্ষা,/
আর কয়লা কালো শিক্ষা নিয়ে, মানুষ করে ভিক্ষা।” ~ আমি মুখ্য সুখ্য মানুষ (২০০৩)৷

“হাসপাতালের বেডে টিবি রোগীর সাথে খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা।” ~ সারে যাহাঁ সে আচ্ছা (১৯৯৩)৷

“…দিয়েছে আশ্র‍য় হাসপাতাল, যেখানে মৃত্যুর খাসমহল, সেখানে আমরা জীবনের নেশায় মাতাল।” ~ সকাল থেকে লুকোচুরি (১৯৯৫)৷

“সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ, আসলে তো তোমরাই করেছো শেষ,/হাসপাতাল না থাকলে জনগণ নার্সিং হোমে যাবে অবশেষ,/সেখানে জবাই হবে, উপরি কামাই হবে, মানুষের সেবার কী দরকার?” ~ ডাক্তার (২০০৪)৷

৮. পুঁজিবাদ ও ভোগবাদ৷
“যদি চাও সফলতা, মেনে নাও এই সিস্টেম,
ফেলে দাও শ্রোতের মুখে, আদর্শ বিবেক ও প্রেম।”~অ্যাম্বিশন (১৯৯৪)।

“সে দেশে অবহেলায় যখন ফোকলা সংস্কৃতির মাঢ়ি
অবহেলায় যখন ফোকলা সংস্কৃতির মাঢ়ি
বিদেশি channel তখন পৌঁছে যে যায় বাড়িবাড়ি।” ~ উলটো রাজার দেশে (১৯৯৫)৷

“আমার গান শুনে কী আর হবে, যাও না disco bar-এ,/’কাভি খুশী, কাভি গাম’ দেখ বাবার শ্রাদ্ধ করে।” ~ দিন শেষে রাত্রি আসে (২০০৪)৷

“ইচ্ছেরা দিনে রাতে চাওয়ার নেশায় মাতে
মন কি চায় বোঝা যায় না,/চাওয়া মানে দরকারি ফ্রিজ — টিভি, গাড়ি — বাড়ি,/চাওয়াকে রোধ করা যায় না।”~ ইচ্ছেরা দিনে রাতে (২০০৪)।

“শপিং মলের রয়েছে দাঁড়িয়ে, /ভোগবাদী লোভ দু-হাত বাড়িয়ে,/ বিবেক বেকুব গিয়েছে হারিয়ে- হে ভগবান!” ~হে ভগবান (২০১৫)।

“বললে মেঘে কী রোদ জমছে?/দেখছির জিডিপির গ্রোথ কমছে,/ দেশের ৮০% টাকা, দশটা পরিবাবের কাছেই রাখা।” ~ হয়তো তোমারই জন্যে (২০২৩)৷

৯. নারী স্বাধীনতা৷
“চেনা বিছানায় চুরি সম্মান, /পুরোনো স্বপ্ন শত পাখি হয়ে সুদূরে দিয়েছে পাড়ি।/লাগে মাসকারা দুচোখ আঁকতে, ক্লান্তির কালো রংকে ঢাকতে,/ রাতের চাদরে মুখ ঢেকে খোঁজো কিসের সান্তনা?” ~ নীলাঞ্জনা-২ (১৯৯৪)৷ টিকা: আমার মনেহয় না পৃথিবীতে আর কেউ কোনোদিন Marital rape নিয়ে গান বেঁধেছে৷

“তোর খ্যাদা নাক, কালো রং, সব্বাই বলে সং, আসল অন্তরায় বাবার পকেট ফুটো,/ধনবতী না, রূপবতীও না
তুই তো মুক্তো, আসলে ঝুটো।/ বিয়ে তো হবে না, কথাও কবে না,/ আইবুড়ি বলে শুধু দূরদূর ছাই ছাই,/
আসলে দিলে পণ, দেবে রে তনু-মন, /
তোকেই সুন্দরী বলবে সব সালাই” ~ কালো মেয়ে (১৯৯৪)৷

'বারো টাকা' শীর্ষক গোটা গানটাই৷ আজ পর্যন্ত কোনো ভারতীয় স্রষ্টার সাহস হোলো না যৌনকর্মীদের যন্ত্রনা নিয়ে একটা গান করার৷

“অফিসের অফিসার বক্র চাহনি তার,
খেটে খাওয়া মেয়েরা তো ভোগ্য।” ~কোনো এক মেয়ে (১৯৯৫)।

“তোর সকল লজ্জা-শরম ভাসবে ওই নদীর জলে
করবে সে তোরে দাসী ভালোবাসার মায়াবলে।”
~যাইয়ো না, যাইয়ো না, কন্যা (১৯৯৬)৷

“চাঁদমামাই দেবে স্বপন/স্বপ্ন দিতে আমি কি আর পারি?
যে পৃথিবীতে আনলাম তোকে/বাসযোগ্য হয়নি সে আমারই!”~ঘুম আয়রে (২০০২)।

“আমার ইচ্ছে করে তুই যখন অসহায়/গোটা দুনিয়াটাকে বলি মুর্দাবাদ।”~ইচ্ছে (২০১৫)।

“লক্ষ টাকা খরচ করে তোমায় সাজাই,/আরো কত লক্ষ টাকার বসন-ভূষণ-/এদিকে আমার মেয়েই বসনহীন হাসপাতালে,/আকাশ-বাতাস কালো করে ঘৃণার দূষণ।”~মা তুমি এসো না (২০২৪)।

এবার একটু সময় নিয়ে একবার গুনে দেখুন উপরের ফর্দে উল্লেখিত গানের মধ্যে কটি গান ২০১১-র পরে প্রকাশ পেয়েছে৷ আমার বিশ্বাস অনেকগুলোই পাবেন৷ প্রশ্ন এটা হওয়া উচিত নয় যে নচিকেতা কেন প্রতিবাদ করছেন না, প্রশ্ন এটা হওয়া উচিত, যে এই গানগুলো কোন কৌশলে আপনাদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। রইলো বাকি ট্রলারদের কথা৷ একজন মানুষ যিনি লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা মিলিয়ে ৯বার টিকিটের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন কারণ তিনি ১৯৯৬ সালে লিখেছিলেন, “জীবন যুদ্ধের শেষে, বিজয়ী ক্লান্ত বেশে, আমরা সেই এক নিমেষে সিংহাসন ছেড়ে যাওয়া”-তাঁকে ট্রোল কেন হতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য নচিকেতা দেননি৷ দিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ৷ “রাতে ঘুমোবার আগে ভালোবাসার আগে, প্রশ্ন করো কোন্ দল, তুমি কোন্ দল?”

নচিকেতার যা বলার তিনি বলেই দিয়েছেন৷ আর নতুন করে কিছুই বলার নেই এই প্রতীকী বিষয়ে৷ বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে যে পোস্ট বা পোস্টারের বাইরে আর কিছুই প্রতিবাদ বলে গণ্য করা হয় না ৷ তাই মানুষের উদ্দেশ্যে, তাঁর লেখা একটি গানের কথাই বলবো,
“মন কে বলি, ‘খোঁজ এ মন, সোশ্যাল মিডিয়া সর্বক্ষণ,/ না, পারেনা হোতে মনের আয়না।” এখনো তাঁর গানই “দূরে রামধনু আকাশের বুকে এঁকে যায় বুঝি জীবনের মানে।”

শেষে তোমাকে একটাই কথা বলবো তোমারই কবিতার মাধ্যমে,
“পোকারা তো বাঁচবেই, উল্লাসে নাচবেই, আমরাই শেষ অতিকায়।” তুমিই শেষ অতিকায়৷

শুভ জন্মদিন, কমরেড!

Sign up to discover human stories that deepen your understanding of the world.

Free

Distraction-free reading. No ads.

Organize your knowledge with lists and highlights.

Tell your story. Find your audience.

Membership

Read member-only stories

Support writers you read most

Earn money for your writing

Listen to audio narrations

Read offline with the Medium app

--

--

Agnish Kumar Das
Agnish Kumar Das

Written by Agnish Kumar Das

A budding forest ecologist who loves writing, birdwatching, and engaging in conversations about most things.

No responses yet

Write a response