হেঁয়ালির জালবিস্তার।

Agnish Kumar Das
1 min readMar 17, 2024

--

নতুন বিশ্বে সবকিছুই মোটামুটি বোতামমুখী৷ বোতামমুখী হওয়ার এই স্রোত অনেকদিন অব্দি হুগলির গতিতে চললেও, সাম্প্রতিককালে সে ভাগীরথীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে বলেই মনে হয়৷ এই বোতামমুখী সমাজে চুপিসারে চলে আসে অনলাইন পরীক্ষা৷ নদীও যেমন উপনদীতে বিভক্ত হয়ে যায়, অনলাইন পরীক্ষাও দুরকম হয়৷ তার একটির নিদর্শন, আমরা কোভিড অতিমারি পৃথিবী শাসনের সাময়িক ভার নেওয়ার আগে দেখতে পাইনি৷

প্রথম উপনদীটি কিরকম? প্রথমটির ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছাতে হত, এবং সেখানে গিয়ে ফোন, হাত ঘড়ি, প্যান্টের বেল্ট, বটুয়া জমা রেখে একটি ঘরে বসে প্রশ্নের উত্তর দিতে হত৷ সাধারণ পরীক্ষার সাথে এর তফাৎ এইটুকুই যে প্রশ্নগুলো পৃষ্ঠার বদলে কম্পিউটার স্ক্রিনে থাকে, এবং ওই বোতাম টিপে উত্তরগুলো দিতে হয়৷ ব্যস, এইটুকুই৷

দ্বিতীয় উপনদীর কথায় এবার আসি৷ এখানে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে বসেই পরীক্ষা দিতে হয়৷ পরীক্ষাটি দেওয়ার সময়ে, তাদের কম্পিউটারের ক্যামেরাটা চালু রাখতে হয় শুধু। এই পরীক্ষার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল টুকলি৷ সৌভাগ্যক্রমে, অনলাইন ক্লাস করতে হলেও, এইরকম পরীক্ষায় আমায় অংশগ্রহণ করতে হয়নি৷

আমার একজন চেনা মানুষকে এরকম এক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল দুবার৷ সেই মানুষটি আমার থেকে অনেক ভালো, কৃতি ছাত্র৷ প্রথমবার সে সৎভাবে পরীক্ষা দিয়ে অসফল হয়, আর হাড়েহাড়ে টের পায় যে রেফারিহীন খেলায়, প্রায় সবাই নিজের ইচ্ছায় বক্সে ধাক্কাধাক্কি করে পেনাল্টি আদায় করে গোল মেরেছে৷ দ্বিতীয়বার সেও একই কাজ করে, এবং সফল হয়৷

এখন প্রশ্ন সেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নয় যারা সৎভাবে একশোতে আশি পেত, এবং অসৎ রাস্তা অবলম্বন করে নব্বই পেয়েছে৷ প্রশ্ন তাদের নিয়ে যারা সৎভাবে তিরিশ পেত, কিন্তু অসৎ পথে পঁচানব্বই পেয়েছে। প্রশ্ন তাদের নিয়ে যারা অসৎ পথের পথিকৃৎ হয়ে একশোতে দেড়শো পেয়ে বসে আছে৷

হেঁয়ালির আশ্রয় আমি ছাড়বো না৷ সময় এসে গেছে, আবার মানুষের সেই বোতাম টেপার বেলা৷

--

--

Agnish Kumar Das

A budding forest ecologist who loves writing, birdwatching, and engaging in conversations about most things.